Tuesday, July 26, 2016

Salafi-Wahabi summary

সালাফি আন্দোলন - সংক্ষেপে

Salafi Movement - in brief


সালাফি শব্দের আভিধানিক অর্থ অতীতচারিতা, বা পবিত্র পূর্বপুরুষদের (pious predecessors) নিঃশর্ত ভাবে অনুসরণ । যারা সালাফি মতবাদ চর্চা করেন, তাঁরা ইস্‌লামের নবি ও তাঁর সাহাবিদের অনুসৃত ইস্‌লাম অনুসরণ করতে চান । তাদের মতে সেটাই ধর্মের সবচেয়ে নির্ভেজাল রূপ । খাঁটি মুসলমানের পক্ষে গানবাজনার মতো ‘বেহুদা’ কাজ মোটে জায়েজ অর্থাৎ অনুমোদনযোগ্য নয় । পিরের দরগা বা মাজারে শ্রদ্ধা জানানো খাঁটি মুসলমান হয়ে ওঠার পথে অন্তরায় । সালাফিরা মনে করেন, বিধর্মীদের এমন কোন কিছু টিকিয়ে রাখা যাবে না যা মুসলমানের মনে শেরেক (পৌত্তলিকতা)-এর জন্ম দেয় । নিরাকার সাধনায় কোনও বাধা তারা সহ্য করবেন না । তার মধ্যে যেমন আছে মক্কার কাবা, যার দিকে ফিরে বিশ্বের তাবৎ মুসলমান নামাজ পড়ে । মদিনায় মহম্মদের মসজিদটিও তাঁরা ধ্বংস করতে চান, কারণ তা মুসলমান‌কে আল্লা এবং মানুষের মাঝে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির পূজায় লিপ্ত করছে । গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে কয়েকটি দরগা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন সালাফিরা । কেবল বিশ্বাসে নয়, পোশাকে, আচরণে হতে হবে নির্ভেজাল ইস্‌লামের অনুসারী । [মিলন দত্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ জুলাই ২০১৬]


সালাফিরা মহম্মদের অনুসরণে বা নির্দেশ অনুযায়ী -
  • তিন আঙ্গুল যথা বুড়ো আঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে আহার গ্রহণ করে;
  • খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে পরিষ্কার করে;
  • তিন ঢোঁকে জল খায় এবং
  • মিস্‌ওয়াক বা পীলু (Meswak/Peelu) গাছের ডাল দিয়ে দাঁতন করে ।
এছাড়া বিবাহ করা, সুন্নৎ করা (Circumcision) ও সুগন্ধী যেমন আতর ব্যবহার করা তো অবশ্য কর্তব্য । [1, 2] 


ইস্‌লামে সময়ের সাথে সাথে যে স্বাভাবিক পরিবর্তন/নতুনত্ব এসেছে/আসছে এরা সেগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে । এরা শুধু কোরানহাদিসের নির্দেশ, এবং প্রথম তিন মুসলমান প্রজন্মের অর্থাৎ মোহম্মদ, তাঁর অনুচর ও তাঁদের অনুগামীদের সংস্কার অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার পক্ষপাতি । কোন রকম বোধ-বুদ্ধি-বিচারের প্রয়োগ (কালাম), তা যদি সত্য নির্ণয় করতে সাহায্যও করে, তাও এদের কাছে হারাম । একমাত্র আরবি ভাষায় লিখিত কোরান এবং হাদিসের কথা অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে পালন করে যেতে হবে । কোন রকম প্রশ্ন করে বা প্রজ্ঞার ব্যবহার করে ধর্মের ধারণা গড়ে তোলার বা গূঢ় অর্থ অন্বেষণ করার চেষ্টা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ, কারণ এর ফলে ইস্‌লামে নতুনত্ব/অভিনবত্ব চলে আসার আশঙ্কা থাকে । [উইকিপিডিয়া]


সালাফি আন্দোলনের তিনরকম ধারা আছে :-


১)রাজনীতি বিবর্জিত বিশুদ্ধতাবাদী (purists),
২)সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মি (activists), যেমন মিশরের "মুস্‌লিম ব্রাদারহুড্‌" (Muslim Brotherhood)
৩)সশস্ত্র জিহাদি (jihadists) যারা শরিয়া ভিন্ন অন্য কোন শাসনতন্ত্র যেমন গণতন্ত্র অথবা শিয়া শাসনকে অস্বীকার করে । উদাহরণ আল-কায়েদা (Al-Qaeda), আইএস (ISIS), বোকো হারাম (Boko Haram) এবং আল-শাবাব (Al-Shabaab) । [wiki]


সালাফি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্য :-


এই দুটো আন্দোলন পৃথক ভাবে শুরু হয়েছিল । দুটো মতবাদের শত্রু যদিও বা এক - শিয়া, সুফি, বিধর্মী এবং পৌত্তলিক - গোড়ায় সালাফিরা কিন্তু ওয়াহাবিদের মত এত বেশী হিংসাপরায়ন এবং অসহিষ্ণু ছিল না । পরে কিছু সালাফি, ওয়াহাবি আন্দোলনের জনক মোহম্মদ ইবন আবদাল ওয়াহাবকে সালাফি বলে স্বীকৃতি দেয় । এর ফলেই ওয়াহাবিরা নিজেদের সালাফি বলে দাবি করতে শুরু করে এবং সৌদি আরবের রাজধর্ম অর্থাৎ ওয়াহাবি মতের ইস্‌লাম, সালাফি-মতের কিছু অংশের সাথে মিশে যায় । তাই সাধারণভাবে এটা বলা যায় যে প্রত্যেক ওয়াহাবিই সালাফি, কিন্তু সব সালাফি ওয়াহাবি নয় । [1, 2]


পেট্রো-ইস্‌লাম (petro-Islam)


পেট্রো-ডলারে বলীয়ান সৌদি আরব 1975 থেকে বছরে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে তাদের দেশের রাজধর্ম অর্থাৎ ওয়াহাবি মতের সালাফি ইস্‌লামের প্রচার করে চলেছে । এই পেট্রো-ইস্‌লামের সামনে পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইস্‌লাম যা স্থানীয় জল-বায়ু-মাটি ও মানুষের সাহচর্যে লালিত হয়েছিল হাজার বছর ধরে । এর ফলে স্থানীয় মুসলমানেরা ইস্‌লামের এই আরবি সংস্করণটাকেই প্রামান্য বলে মনে করছে । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য শীতল যুদ্ধ (cold war) চলাকালীন সোভিএত ইউনিয়নের বাৎসরিক প্রচারের বাজেট ছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার । [wiki]

No comments:

Post a Comment