Tuesday, July 26, 2016

Salafi-Wahabi summary

সালাফি আন্দোলন - সংক্ষেপে

Salafi Movement - in brief


সালাফি শব্দের আভিধানিক অর্থ অতীতচারিতা, বা পবিত্র পূর্বপুরুষদের (pious predecessors) নিঃশর্ত ভাবে অনুসরণ । যারা সালাফি মতবাদ চর্চা করেন, তাঁরা ইস্‌লামের নবি ও তাঁর সাহাবিদের অনুসৃত ইস্‌লাম অনুসরণ করতে চান । তাদের মতে সেটাই ধর্মের সবচেয়ে নির্ভেজাল রূপ । খাঁটি মুসলমানের পক্ষে গানবাজনার মতো ‘বেহুদা’ কাজ মোটে জায়েজ অর্থাৎ অনুমোদনযোগ্য নয় । পিরের দরগা বা মাজারে শ্রদ্ধা জানানো খাঁটি মুসলমান হয়ে ওঠার পথে অন্তরায় । সালাফিরা মনে করেন, বিধর্মীদের এমন কোন কিছু টিকিয়ে রাখা যাবে না যা মুসলমানের মনে শেরেক (পৌত্তলিকতা)-এর জন্ম দেয় । নিরাকার সাধনায় কোনও বাধা তারা সহ্য করবেন না । তার মধ্যে যেমন আছে মক্কার কাবা, যার দিকে ফিরে বিশ্বের তাবৎ মুসলমান নামাজ পড়ে । মদিনায় মহম্মদের মসজিদটিও তাঁরা ধ্বংস করতে চান, কারণ তা মুসলমান‌কে আল্লা এবং মানুষের মাঝে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির পূজায় লিপ্ত করছে । গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে কয়েকটি দরগা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন সালাফিরা । কেবল বিশ্বাসে নয়, পোশাকে, আচরণে হতে হবে নির্ভেজাল ইস্‌লামের অনুসারী । [মিলন দত্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ জুলাই ২০১৬]


সালাফিরা মহম্মদের অনুসরণে বা নির্দেশ অনুযায়ী -
  • তিন আঙ্গুল যথা বুড়ো আঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে আহার গ্রহণ করে;
  • খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে পরিষ্কার করে;
  • তিন ঢোঁকে জল খায় এবং
  • মিস্‌ওয়াক বা পীলু (Meswak/Peelu) গাছের ডাল দিয়ে দাঁতন করে ।
এছাড়া বিবাহ করা, সুন্নৎ করা (Circumcision) ও সুগন্ধী যেমন আতর ব্যবহার করা তো অবশ্য কর্তব্য । [1, 2] 


ইস্‌লামে সময়ের সাথে সাথে যে স্বাভাবিক পরিবর্তন/নতুনত্ব এসেছে/আসছে এরা সেগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে । এরা শুধু কোরানহাদিসের নির্দেশ, এবং প্রথম তিন মুসলমান প্রজন্মের অর্থাৎ মোহম্মদ, তাঁর অনুচর ও তাঁদের অনুগামীদের সংস্কার অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার পক্ষপাতি । কোন রকম বোধ-বুদ্ধি-বিচারের প্রয়োগ (কালাম), তা যদি সত্য নির্ণয় করতে সাহায্যও করে, তাও এদের কাছে হারাম । একমাত্র আরবি ভাষায় লিখিত কোরান এবং হাদিসের কথা অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে পালন করে যেতে হবে । কোন রকম প্রশ্ন করে বা প্রজ্ঞার ব্যবহার করে ধর্মের ধারণা গড়ে তোলার বা গূঢ় অর্থ অন্বেষণ করার চেষ্টা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ, কারণ এর ফলে ইস্‌লামে নতুনত্ব/অভিনবত্ব চলে আসার আশঙ্কা থাকে । [উইকিপিডিয়া]


সালাফি আন্দোলনের তিনরকম ধারা আছে :-


১)রাজনীতি বিবর্জিত বিশুদ্ধতাবাদী (purists),
২)সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মি (activists), যেমন মিশরের "মুস্‌লিম ব্রাদারহুড্‌" (Muslim Brotherhood)
৩)সশস্ত্র জিহাদি (jihadists) যারা শরিয়া ভিন্ন অন্য কোন শাসনতন্ত্র যেমন গণতন্ত্র অথবা শিয়া শাসনকে অস্বীকার করে । উদাহরণ আল-কায়েদা (Al-Qaeda), আইএস (ISIS), বোকো হারাম (Boko Haram) এবং আল-শাবাব (Al-Shabaab) । [wiki]


সালাফি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্য :-


এই দুটো আন্দোলন পৃথক ভাবে শুরু হয়েছিল । দুটো মতবাদের শত্রু যদিও বা এক - শিয়া, সুফি, বিধর্মী এবং পৌত্তলিক - গোড়ায় সালাফিরা কিন্তু ওয়াহাবিদের মত এত বেশী হিংসাপরায়ন এবং অসহিষ্ণু ছিল না । পরে কিছু সালাফি, ওয়াহাবি আন্দোলনের জনক মোহম্মদ ইবন আবদাল ওয়াহাবকে সালাফি বলে স্বীকৃতি দেয় । এর ফলেই ওয়াহাবিরা নিজেদের সালাফি বলে দাবি করতে শুরু করে এবং সৌদি আরবের রাজধর্ম অর্থাৎ ওয়াহাবি মতের ইস্‌লাম, সালাফি-মতের কিছু অংশের সাথে মিশে যায় । তাই সাধারণভাবে এটা বলা যায় যে প্রত্যেক ওয়াহাবিই সালাফি, কিন্তু সব সালাফি ওয়াহাবি নয় । [1, 2]


পেট্রো-ইস্‌লাম (petro-Islam)


পেট্রো-ডলারে বলীয়ান সৌদি আরব 1975 থেকে বছরে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে তাদের দেশের রাজধর্ম অর্থাৎ ওয়াহাবি মতের সালাফি ইস্‌লামের প্রচার করে চলেছে । এই পেট্রো-ইস্‌লামের সামনে পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইস্‌লাম যা স্থানীয় জল-বায়ু-মাটি ও মানুষের সাহচর্যে লালিত হয়েছিল হাজার বছর ধরে । এর ফলে স্থানীয় মুসলমানেরা ইস্‌লামের এই আরবি সংস্করণটাকেই প্রামান্য বলে মনে করছে । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য শীতল যুদ্ধ (cold war) চলাকালীন সোভিএত ইউনিয়নের বাৎসরিক প্রচারের বাজেট ছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার । [wiki]

Saturday, July 23, 2016

Wahabi Cleansing Movement

ওয়াহাবি শুদ্ধিকরণ আন্দোলন

তন্ময় ভট্টাচার্য, দৈনিক যুগশঙ্খ, শিলচর, ১৫ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, পৃষ্ঠা-৬ (পরিমার্জিত)

Wahabi Cleansing Movement

Tanmoy Bhattacharya, Dainik Jugasankha, Silchar, 15 July 2016, Friday, page-6 (Adapted)

ভূমিকা (Introduction) :-


ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রেখে, 'ধর্মনিরপেক্ষ' ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মমত কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম নয় । এ দেশে সনাতন ধর্মে যাঁরা বিশ্বাস রাখেন তাঁরা আসলে আবহমান কাল ধরে চলে আসা হিন্দু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস রাখেন । যে সংস্কৃতি কোনও ধর্মীয় মতকে একমাত্র মত বলে প্রচার করতে পারে না । সনাতন ধর্মের কোনও প্রতিষ্ঠাতা নেই । এর আবহমানতাই একে একটি প্রতিষ্ঠা দিয়েছে । এর ফলে যে-অর্থে ইস্‌লাম ও খ্রিস্টধর্ম আমাদের কাছে ধর্ম বলে জ্ঞাত, সেই বিশ্লেষণে হিন্দুধর্মকে ধর্ম বলা যাবে না ।

অন্য দিকে ইস্‌লাম একটি রাজনৈতিক ধর্ম, এর রাজনৈতিক চেহারা কেউই ঢাকার চেষ্টা করে না । হজরত মোহম্মদ নিজে একাধারে ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, দক্ষ শাসক ও যুদ্ধ পরিচালক । তাই ইস্‌লাম ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক করে দেখে না । দুটি ইস্‌লামি গোষ্ঠী, শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ দেড় হাজার বছর ধরেই অব্যাহত । ধর্মীয় উদ্দেশে অস্ত্রধারণ করা ইস্‌লাম ধর্মের কট্টরপন্থীদের কাছে নতুন কিছু নয় । 


ইস্‌লাম ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব (Islam & family feuds) :-


ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে (সম্ভবত ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে) হজরত মোহম্মদের জন্ম হয় মক্কার হাসেম বংশে ও তাঁর দিব্যজ্ঞান লাভ হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে । ওঁনার মৃত্যু হয় ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে । হজরত মোহম্মদের  প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন আবু সুফিয়ান । এরা একই গোষ্ঠীর । কিন্তু কাবার তীর্থক্ষেত্রের অধিকার নিয়ে দুই প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব একসময় বিরাট যুদ্ধ ডেকে আনল । মোহম্মদের পূর্বপুরুষ ছিলেন হাশেম ও আবু সুফিয়ানের পূর্বপুরুষ উমাইয়া । এই হাশেম ও উমাইয়া সম্পর্কে কাকা-ভাইপো । এই তীব্র পারিবারিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ইস্‌লামের ইতিহাস । এই দ্বন্দ্ব ইস্‌লামকে আর ছেড়ে যায়নি । ৬৩০ সালে মোহম্মদের প্রবর্তিত ইস্‌লাম ধর্মে উদ্দীপিত হয়ে মোহম্মদের নেতৃত্বে এক ছোট দল উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানকে পরাজিত করে মক্কার প্রধান তীর্থ কাবা দখল করে । এই বিজয়ের পর হজরত মোহম্মদ দৃঢ় প্রত্যয়ে একেশ্বরবাদের প্রচারকে মহাসংগ্রামে পরিণত করলেন । মোহম্মদের মৃত্যুর ২১ বছর পরে খলিফা আলিকে কুটনৈতিক যুদ্ধে হারিয়ে আবু সুফিয়ানের পুত্র মুবাইয়া আবার ইস্‌লাম বিশ্বের ক্ষমতা দখল করেন । এই বংশের রাজত্ব চলে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । আরেক নৃশংস অভিযানে উমাইয়াদের উৎখাত করে হাশেম বংশীয় আবাসীয় রাজারা ক্ষমতা অধিকার করে । ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের হাতে আরবদের রাজত্ব চিরতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । এরপর আরবরা আর রাজশক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি । কিন্তু ধর্ম হিসেবে ইস্‌লাম বিস্তার লাভ করে ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । ভারতবর্ষে কিন্তু ইস্‌লাম রাজশক্তি হিসেবে দেখা দেয়, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ।


ওয়াহাবি শুদ্ধিকরণ আন্দোলন (Wahabi Cleansing Movement) :-


অষ্টাদশ শতকে আরব দেশে ইস্‌লাম ধর্মের শুদ্ধিকরণের নামে ইস্‌লামকে বাইরের প্রভাব থেকে মুক্ত করে তোলার এক প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠে । আব্দুল ওয়াহাবের পুত্র মোহম্মদ ইবন আবদাল ওয়াহাব (১৭০৩-৯২) এই শুদ্ধি আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন । ওয়াহাবি আন্দোলনের আগেও শুদ্ধিকরণ আন্দোলন ছিল । কিন্তু ওই সব আন্দোলন কিছু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল । ওয়াহাবিরা ইস্‌লামের সুন্নি সম্প্রদায়ের, এরা ধর্মীয় চিন্তায় অসম্ভব কট্টর । এরা কেতাবী তাত্ত্বিক ও ধর্মগ্রন্থে লেখা নির্দেশ ছাড়া কিছুই মানে না । এরা ইস্‌লামের স্থপতি হজরত মোহম্মদের সমাধিস্থল স্মৃতিস্তম্ভ ইস্‌লাম ধর্ম-বিরোধী বলে একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল । ওয়াহাবিদের মতে একজন মুসলমান কেবল ধর্মকে স্বীকার করলেই চলবে না, তাকে পোশাক-পরিচ্ছদে, আচার-আচরণে ইস্‌লাম ধর্মবাচক সব প্রতীক বহন করে চলতে হবে যাতে অমুসলমান থেকে আলাদা করে তাকে স্পষ্ট চেনা যায় ।

ওয়াহাবিদের কাছে অবশ্য মুসলমান বলতে শুধুই সুন্নি মুসলমান, শিয়ারা তাদের কাছে চরম শত্রু । কারণ শিয়াদের কথা তো কোরানে লেখা নেই । ১৮০১ সালে ওয়াহাবিরা বাগদাদে হুসেনের সমাধির ওপর ধ্বজা ভেঙ্গে দিয়েছিল অনৈস্লামিকতার প্রতীক বলে । সেইসঙ্গে ৫০০০ মানুষকে হত্যা করেছিল । হুসেন হজরত মোহম্মদের নাতি আর শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে অতি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি । শিয়া সম্প্রদায় ওয়াহাবি পন্থা মানে না, তবে শিয়াদের নিজস্ব কট্টরপন্থীরা আছে ।


সৌদি আরব ও ওয়াহাবি আন্দোলন (Saudi Arab & Wahabi Movement) :-


সৌদি রাজাদের পূর্বপুরুষ একসময় আরবের হেজাজ প্রদেশের মরুভূমির এক কোণায় এক ছোট্ট জায়গার শেখ ছিল । ওয়াহাবিদের শিষ্য হয়ে ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে বিশাল অঞ্চল দখল করে ফেলল, আজ যাকে আমরা সৌদি আরব বলি । এর মধ্যে মক্কা-মদিনার মতো তীর্থস্থানও আছে । এদের তুর্কি সম্রাটরা মোটেই পছন্দ করত না । তখন তুর্কি সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু সময় । প্রথম মহাযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এদের স্বীকৃতি দেয় । ওয়াহাবি ধর্ম সৌদি আরবে স্বীকৃত ধর্ম । তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ায় সৌদি আরব স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হয় । আজও আধুনিক তুরস্ক ওয়াহাবিদের স্বীকার করে না । তবে এদের সৌদি আরবের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক আছে ।


ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রভাব (Influence of Wahabi Movement in Indian subcontinent) :-


ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই ভারতের ইস্‌লামপন্থীদের মধ্যে এই আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে । আগে বাংলার মুসলমানরা নিজেদের ইস্‌লাম নামকরণে এত কট্টরভাবে আরবি-ফার্সি নাম ব্যবহার করত না । কেবল নামে হিন্দু কি মুসলমান অনেক সময় বোঝাই যেত না । একটি উদাহরণ দিলেই তা বোঝা যাবে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি ছিল উত্তরবঙ্গের এক গ্রাম পতিসরে । সেই গ্রামের মালির নাম ছিল রূপচাঁদ প্রামাণিক, ধর্মে সে ছিল মুসলমান । তার পুত্র এই ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রভাবে হয়ে গেল ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ । মোটামুটিভাবে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলায় নামকরণে আরবি-ফার্সির ব্যবহার বেশি ছিল না । এই আন্দোলন তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, ধর্মীয় সংস্কার ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিপুল পরিবর্তন এনে দিল । এই ওয়াহাবি শুদ্ধিকরণের প্রভাবে ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি আরও সহজ হয়ে উঠেছিল । 


উপসংহার (Conclusion) :-


গত কয়েক দশকে আরবের এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগ্রামের বিশ্বায়ন ঘটেছে । বর্তমানে "শান্তি দূরদর্শন", সোশাল মিডিয়া ও সস্তার চাইনিজ্‌ স্মার্টফোনের বদান্যতায় পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে ওয়াহাবি প্রভাব বাড়ছে । মগজধোলাই হয়ে ঐস্‌লামিক ধর্মসংগ্রামী/জেহাদিদের অনেকেই বেহেস্তে যাবার জন্য অবধারিত মৃত্যুকে বরণ করতে দ্বিধা করে না । মুশকিল হচ্ছে, ওইসব বেহেস্তকামীরা খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর সঙ্গে আজকের এই একবিংশ শতাব্দীকে পৃথক করে দেখে না । মগজধোলাই এবং অনেক ক্ষেত্রেই ক্যাপটাগন (Captagon or IS drug) নামক এক মাদক সেবন করার পর এরা আর নম্র ধর্মাচারী থাকে না, হয়ে ওঠে নির্মম কাফের জবাই করার জম্বি (zombie'র স্থলে পশু শব্দ ব্যবহার করলে পশুদের অপমান করা হয়) । সারা বিশ্বে ইস্‌লামি জঙ্গি হানার পেছনে সর্বত্রই ওয়াহাবি চিন্তাধারা কাজ করছে । গান্ধিজী বলতেন 'চোখের বদলে চোখ' এই নীতি মানলে সারা বিশ্ব একদিন অন্ধ হয়ে যাবে । এরা বিশ্বকে এরকম অন্ধত্বের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে ।


Reference :-

"Islam in the World", 2006 by Malise Ruthven, Oxford University Press; 3rd edition.
"A Literary History of the Arabs", 1907 by R.A. Nicholson.


এক কাফের বা মালাউনের সংযোজন (Addition from an idol worshipping infidel) :-


আর কত বছর আমরা, অর্থাৎ পৌত্তলিক বাঙ্গালী হিন্দুরা, আরশোলার মত বেঁচে থাকব ? আমাদের অস্তিত্ব এই ওয়াহাবিদের (সালাফিদের) কাছে অসহ্য । তাই আসুন -
১) আমরা সবাই দলে দলে সালাফি হয়ে যাই অথবা
২) গণিমতের মাল হিসেবে আমাদের মা, বোন, স্ত্রী এবং কন্যাদের ওদের হাতে সমর্পণ করে নিজেরা জবাই হয়ে যাই যেমন হয়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সনে মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আয়ুব খানের হাতে পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) । 


Sunday, July 17, 2016

Bengali Hindu Holocaust-5

বাংলাদেশ ছাড়লেন হুমকি পাওয়া রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ

সাময়িক প্রসঙ্গ, শিলচর, ১২ জুলাই ২০১৬, মঙ্গলবার, পৃষ্ঠা-১

Threatened Maharaj of Dhaka Ramakrishna Mission leaves Bangladesh

Samayik Prasanga, Silchar, 12 July 2016, Tuesday, page-1

ইস্‌লামিক স্টেটের (IS) নামে হুমকি পাওয়া বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সম্পাদক স্বামী সেবানন্দ ভারতে চলে গেছেন । ঢাকা ছাড়ার কারণ অবশ্য খোলসা করা হয়নি । জানা গেছে, গত ৪ জুলাই তিনি কলকাতায় চলে গেছেন ।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন আইএস-এর চিঠিতে জনৈক এবি সিদ্দিক স্বামী সেবানন্দকে খুনের হুমকি দেয় । তাকে ২০-৩০ জুনের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয় । বিষয়টি নিয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁর হস্তিক্ষেপ কামনা করেন । এর আগে ১৫ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে ধর্মপ্রচার নিষেধ করে চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় । চিঠির ওপরের অংশে কম্পিউটার টাইপে লেখা ছিল 'ইস্‌লামিক স্টেট অব বাংলাদেশ (Islamic State of Bangladesh), চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাঁও মার্কেট' । চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে - 'তোমরা হিন্দু । বাংলাদেশ একটি ইসলামি রাষ্ট্র, এ দেশে ধর্মপ্রচার করতে পারবে না । তোমরা ভারতে যাও । নাহলে তোমাদের কুপিয়ে হত্যা করা হবে ।' পরে এ ঘটনায় রামকৃষ্ণ মিশনের পুরোহিত মৃদুল মহারাজ ওয়ারি থানায় ওই রাতেই একটি সাধারণ ডায়েরি (General Diary) করেন ।

এদিকে, বাংলাদেশের সুন্দরবন ঘেঁষা সাতক্ষীরা জেলার এক কালীমন্দিরের তিন পুরোহিতকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে, গত শনিবার সকালে হাতে লেখা চিঠিটি তালা উপজেলার খলিসখালি ইউনিয়নের হাজরাপাড়া কালীমন্দিরে পৌঁছায় । চিঠিটি মন্দিরের পুরোহিত তপন চ্যাটার্জিকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে । পুরোহিত ছাড়াও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহন চ্যাটার্জিসোমনাথ লাহিড়ির নামে । চিঠিটি পাঠানো হয়েছে তথাকথিত ইস্‌লামিক স্টেটের (আইএস) এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (J.M.B.) নামে । এ চিঠির খবরে খলিসখালি এলাকায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । এ ঘটনায় পুরোহিত তপন চ্যাটার্জির ছেলে মিঠুন চ্যাটার্জি পাটকেলঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (G.D.) করেছেন । সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশসুপার মীর মোদাচ্ছের আলি মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন । তিনি বলেন, 'এটা সন্ত্রাসীদের হুমকি । এই হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের আইনে সোপর্দ করা হবে ।' মন্দিরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু পূজা, অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে । বন্ধ না করলে কুপিয়ে হত্যা করা হবে । তাই সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার খলিসখালিতে কোনও পূজা, অনুষ্ঠান চলবে না । হাজরাপাড়া কালীমন্দিরে নিত্য পূজা হবে না এবং তপন চ্যাটার্জি, মোহন চ্যাটার্জি ও সোমনাথ লাহিড়ি যদি কোনও পূজা করেন তাহলে তাদের কুপিয়ে মারা হবে । চিঠির নিচে লেখা রয়েছে, জে.এম.বি. (আই.এস.) ।

N.B. I have consciously omitted the parentheses around "Hindu" in the blog title. It is time for us - the Bengali Hindus to shed those sickular brackets.
আমি জ্ঞানতই ব্লগের শিরোনামে থাকা "Hindu" শব্দটিকে মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার বন্ধনির অর্গল থেকে মুক্ত করেছি ।  

Saturday, July 9, 2016

Bengali (Hindu) Holocaust-4

হিন্দু উৎখাতে হাসিনা-খালেদায় তফাৎ নেই

অতীন দাশ, দৈনিক যুগশঙ্খ, শিলচর, ৩০ জুন ২০১৬, বৃহস্পতিবার, পৃষ্ঠা-৬

No difference between Haseena & Khaleda in evicting Hindus (in Bangladesh)

Ateen Das, Dainik Jugasankha, Silchar, 30 June 2016, Thursday, page-6

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এমন এক পর্যায় পৌঁছেছে যা অতীতের সমস্ত রেকর্ডই ম্লান করে দিয়েছে । এই অত্যাচারের পেছনে রাষ্ট্রশক্তির প্রশ্রয় এবং যোগসাজশ থাকায় কখনও এর অবসান ঘটবে না, এবং ইস্‌লামিক রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী অমুসলিমদের নিঃশেষ না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলতেই থাকবে । পাকিস্তান প্রায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং শিখদের আনুপাতিক হার এখন দশমিকে উল্লেখ্য । বাংলাদেশে এই প্রয়াস এখন জোর গতি পেয়েছে । রাষ্ট্র ক্ষমতায় হাসিনা না খালেদা, এতে তেমন কোনও তারতম্য ঘটবে না ।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যাঁরা শহিদ বা পাকিস্তান বাহিনীর অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছিলেন, সংখ্যার অনুপাতে হিন্দুরাই ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ, স্বাধীনতার মূল্য তাঁদেরই সবচেয়ে বেশী চুকাতে হয়েছিল । কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার ছিল বৈষম্যমূলক । মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত থেকে ফিরে যাওয়া হিন্দু শরণার্থীরা অনেকেই তাঁদের ফেলে যাওয়া বিষয়-সম্পত্তি ফিরে পাননি । বেদখল হয়ে গেছে । জবরদখলকারীদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লিগ নেতা বা তাদের সমর্থক । দুর্বল সংখ্যালঘুরা প্রাণের ভয়েই অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি । রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা প্রশাসন থেকে সুবিচার পায়নি নির্যাতিত হিন্দুরা ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিমূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় । তিনি যখন দেশের সর্বেসর্বা, প্রধানমন্ত্রী - তখন সিলেট থেকে একটি প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল । তাদের আর্জি ছিল ঢাকা দক্ষিণস্থ মহাপ্রভুর মন্দিরের জবরদখলকৃত জমিজমা ফিরিয়ে দেওয়া । মুজিবর রহমান সব শুনে প্রতিনিধি দলকে মুখের উপর জবাব দেন - তা সম্ভব হবে না । কারণ জবরদখলকৃত জমি উদ্ধার করতে গেলে রাজনৈতিক দিক দিয়ে যেমন অসুবিধা আছে, তেমনি উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়াও সরকারের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে । মূল মন্দিরই বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে । এই ছিল একজন রাষ্ট্রনায়কের স্বীকারোক্তি । প্রতিনিধি দলে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই শেখ মুজিবকে আগে থেকে জানতেন । যুক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির অন্যতম বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-এর সময় তাঁর ভূমিকা এবং পরবর্তীতে সিলেট রেফারেন্ডামে মুসলিম ন্যাশনাল গার্ডের সর্দার হিসেবে সংখ্যা-লঘু-বিরোধী বীরত্বব্যঞ্জক দায়িত্ব পালনের কথা । ঢাকা দক্ষিণের পণ্ডিতকুল সেদিন সংস্কৃত আপ্তবাক্য 'অঙ্গারশতধৌতেন মলিনাঞ্চ ন মুচ্যতে'-র প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিব সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং তিনি ছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী । বিরোধী দলসমূহের গুরুত্ব অস্বীকার করে একদলীয় 'বাকশাল' শাসন প্রবর্তিত হয়েছিল । কিন্তু হিন্দু বাঙালিদের দুর্দশার যে মারণযন্ত্র আয়ুব খান প্রচলিত 'শত্রু সম্পত্তি আইন' - তা বাতিল করার কোনও প্রয়াসই নেওয়া হয়নি । 'শত্রু সম্পত্তি আইন' নাম পরিবর্তিত করে 'অর্পিত সম্পত্তি আইন' নতুন নামকরণ করা হয়েছে, কিন্তু বিষয়বস্তু তো একই রয়ে গেছে । এই শত্রু সম্পত্তি আইনের সুযোগ নিয়েই হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি যেমন আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তেমনি ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হচ্ছে । এই জবরদখলকারীদের মধ্যে আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীরা প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন, এখন দল ক্ষমতায় থাকায় তাদেরই একচ্ছত্র অধিকার । এই জবরদখলকারীদের মধ্যে প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, সাংসদ এবং আঞ্চলিক নেতারাও রয়েছেন । সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দুষ্কর্মের অভিযোগ থানায় এজাহার দাখিল করলেও প্রতিকার হয় না, দুষ্কৃতীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে । যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হয় আওয়ামি লিগ নেতা বা কর্মী, নয়তো দল আশ্রিত সমাজ-বিরোধী । সম্প্রতি পটুয়াখালিতে মা ও মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে - সে আওয়ামি লিগের এক আঞ্চলিক নেতা ।

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএনপি এবং জামাতের হাত রয়েছে বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি বা জামাতের পক্ষে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই । কারণ এই দুই দল সরকারি দলের সাঁড়াশি আক্রমণে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই বিপদে পড়েছে । গুপ্ত হত্যা বা হিন্দুদের উপর আক্রমণের যখনই কোনও ঘটনা ঘটে তখনই ইস্‌লামিক স্টেটের পক্ষ থেকে এর দায়িত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয় । অথচ সরকারে পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো হচ্ছে যে বাংলাদেশে আইএস-এর কোনও অস্তিত্ব নেই । তা হলে এ সব কে বা কারা ঘটাচ্ছে ? সরকারের পক্ষে আজ পর্যন্ত একটি গুপ্ত হত্যা বা সংখালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় একজন অপরাধীকেও আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়নি । প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রকৃত দোষীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে । সম্প্রতি অধ্যাপক রিপন চক্রবর্তীর উপর আক্রমণের ঘটনায় একজন আততায়ীকে জনসাধারণ হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল । কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়, পুলিশ তাকে জিম্মায় নেওয়ার পর ধৃত দুষ্কৃতীটি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে বলে জানানো হয় । এ ঘটনা খুবই অবিশ্বাস্য । যাকে জেরা করে অনেক কিছু জানার অবকাশ ছিল - তাকে এভাবে হত্যা করার পেছনে কী রহস্য রয়েছে সে নিয়ে জোর বিতর্ক দেখা দিয়েছে । এ সব আক্রমণের পেছনে কারা জড়িত - তা না প্রকাশ হওয়ার জন্যেই ধৃতদের ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হচ্ছে বলে যে সন্দেহ - এই ঘটনা সেই অভিযোগকেই পুষ্ট করছে ।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, খালেদা জিয়ার আমলে ব্যাপক হারে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তার প্রতিবেদন পাওয়া সত্ত্বেও এত বছরের মধ্যে কেন প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না । সরকারে এই আচরণে নির্যাতিতদের মধ্যে যেমন হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়েই তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে উৎসাহ পাচ্ছে । শেখ হাসিনা যদি প্রকৃত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সংখ্যালঘু-দরদী হয়ে থাকেন, তা হলে সংসদে তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও কেন 'অর্পিত সম্পত্তি আইন'-এর বিলুপ্তি ঘটছে না ? যারা জবরদস্তি করে হিন্দুদের জমি-বাড়ি থেকে উৎখাত করছে - তাদের বিরুদ্ধে আইনের শাসন এত শ্লথ কেন ? শেখ মুজিবের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহিদের সঙ্গে সম্পাদিত শান্তি চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি । শেখ হাসিনা আমলাতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নিজের দায়িত্ব স্খলন করতে চাইছেন ।

আসলে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় বসবে - তাদেরই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করে চলতে হয় । আওয়ামি লিগের অঙ্গ সংগঠন 'বাংলাদেশ উলেমা লিগ' প্রকাশ্যে মিছিল করে দাবি জানিয়েছে - 'বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা চলবে না, পূজা ইত্যাদি অনৈস্‌লামিক কাজে রাষ্ট্র কর্তৃক কোনও পৃষ্ঠপোষকতা করা চলবে না, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অমুসলিম সুরেন্দ্রকুমার সিংহকে অপসারণ করতে হবে, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য সমিতিকে নিষিদ্ধ করতে হবে ইত্যাদি ।' আওয়ামি লিগে এখন আর সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কথা বলার মতো হিন্দু নেতা নেই । কোনও আসনে আওয়ামি লিগের প্রার্থী পরাজিত হলে প্রকাশ্য সভায় এমন মন্তব্যও শোনা যায় : 'মালাউনরা ভোট দেয়নি - তাই নৌকা ডুবেছে ।'

তসলিমা নাসরিন সঠিকই বলেছেন - 'এখন আর লজ্জা নয়, ভয় হয় ।' বাংলাদেশে যা ঘটছে, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশটি হিন্দুশূন্য হয়ে যাবে । শেখ হাসিনা এখন ইস্‌লামিক ঐক্যজোটের দেশগুলোর প্রতি খুব ঝুঁকেছেন । সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে 'উমরাহ' সেরেছেন এবং আরবের বাদশাহর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ লক্ষ বাংলাদেশিকে ওই দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মক্কা এবং মদিনায় আল্লার ঘর রক্ষার জন্যে বাংলাদেশি সৈন্যদের পাঠাবারও প্রস্তাব রেখেছেন । সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ওয়াহাবি ইস্‌লাম প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ তার ঘাঁটি হয়ে উঠলে সে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াবে ।